রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০

ধ্বংসের ঝোড়ো রেখা

 















মাথা নিচু করলে যতটা আকাশ আঁকা যায়
তার অর্ধেকেরও কম জমি আমাদের সভ্যতার
বইয়ের পাতায় পাতায় অসংখ্য ঘর
স্কুলের দুয়ারে বই হাতে যারা উঠেছিল
তাদের অনেকেরই আজ বয়স হয়ে গেছে
যারা ভেবেছিল স্কুলের ছাদে উঠে মশান দেখা যায়
তাদের গাছের পাতা কবেই গেছে শুকিয়ে

প্রতিবাদের মতো কঠিন শব্দকণার দানায় তৈরি
একসময়কার রোজকার মুখস্থ পথের চোখে
রুমাল বেঁধে পোশাক বদলেছে গর্তের কৌশল
গাছের ভগ্নাংশে চোখ পড়ে আত্মহত্যার দিনলিপি

আলোহীন স্তব্ধতার পৃষ্ঠায় আঁকা ধ্বংসের ঝোড়ো রেখা ।


শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০

মঞ্চে উঠে

 














সভার মঞ্চে উঠলেই মনে হয়
সবাইকে সবকিছু বলে দিই
তারপর ভাবি কী আর বলবো
সেই তো এক অভাব, কোথাও কিচ্ছু হচ্ছে না, 
যে যা পাচ্ছে যা খুশি নিয়ে নিচ্ছে

আমি না বললেও কেউ কেউ তো বলেছে
কী বদলটা হয়েছে তাদের ?
সেই তো অভাবের এক ডাল থেকে আর এক ডালে

আজকেও অনেক কিছু বলবো ভেবেছিলাম
শেষমেষ একটা কবিতা বলে নেমে এলাম ।


বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০

বয়স

 












বয়স তো বাড়বেই
কবে আর কে কোথায়
একা একা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেছে বল?

যেতে যেতে হঠাৎ যদি
তোকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়
তুই মেনে নিতে পারবি?
শুধু তুই কেন, কেউ পারবে না

ওরে ক্ষ্যাপা, এগিয়ে যাওয়াতেই তো মজা
যত এগোবি ততই বদলে বদলে যাবে রঙ
বাড়ুক না বয়স
তুইও কমানোর যাদুটা শিখে নে
চারপাশ দেখে চল
সেরকম দোকান দু'একটা পেয়ে যাবি
পেয়েও যেতে পারিস দু'একজনকে
যাদের কাছ থেকে জেনে নিবি
ঠিক কোথায় হাত দিলে বয়সটা
এক ধাক্কায় এক কুড়িতে নেমে আসবে ।


শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০

রাস্তার কাছে

 















রাস্তার কাছে গেলেই
সে আমাকে তার পরিচয় দেয়
আমি নতুন হলেও
সে আমার চোখ দেখে না
ভালোবাসার কথা বললেও
সে আমাকে ছোঁয় না পর্যন্ত

পাশে বসলে একটাই অভিযোগ ------
কষ্টটুকু তাৎক্ষণিক সামলেই
যুদ্ধে নেমে পড়া কেন ?
ধারাবাহিক শুশ্রূষা কোথায় ?

শান্ত করতে রাস্তাকে বলি -----
আমাদের জীবনটাই এরকম ।



বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০২০

নিজের কপাট

 











একরাশ আবর্জনার মধ্যে থেকে

তিনটি ধান খেয়ে উড়ে গেল
                         সেদিনের চড়াই ।

অনেক অকথার মধ্যে থেকে
তোমার কথা
নিজ গুণে কবে চিনতে পেরেছি ?

ঝড় উঠলে
সব দিক ভুলে
আগে নিজের কপাট বন্ধ করেছি ।

বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০

দূরে গেলেও

 















অত জোর করে বেঁধো না
বাঁধারই প্রয়োজন নেই
তবু যদি বাঁধতেই হয়
হাত দিয়ে জড়িয়ে থাকো
তোমার হাতই জেনে যাবে
কার সঙ্গে বাঁধা আছে এতকাল

এবার দাও না ছেড়ে তাকে
লতার মতো করেই সে ঘুরবে
দূরে গেলেও বুঝতে পারবে
সে আছে তোমার হাতেই ।





মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০

মহাশূন্য















নীল আর তোমার কাছে নীল নেই
হালকা হতে হতে হতে হতে 
এখন সে একটা সমীকরণ হয়ে গেছে ।

ঘাসের বিছানায় শুয়ে এখন 
তুমি আর আকাশ দেখো না
আকাশটা আজ আর তোমার কাছে ছাদ নয়
একটা শূন্য, শুধু শূন্য নয় ------- মহাশূন্য ।

আকাশকে আকাশ ভাবতে আপত্তি কোথায় ?
থাক না মাথার ওপর একটা ছাদ
যাও না এবার ইচ্ছামত যেদিকে খুশি
মাথার ওপর তো একজন ছাতা ধরে রইলই। 

সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০

যুদ্ধ







যুদ্ধে জিতলে না হারলে সেটা বড় কথা নয়

যুদ্ধে বিপরীত দিকে দাঁড়ানো মানুষগুলোর বিরুদ্ধে
কতটা লড়াই দিতে পেরেছ সেটাই বড় কথা
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তোমার মুষ্টিবদ্ধ হাতের মধ্যে
কতখানি অনড় মানসিকতা কাজ করেছে সেটাই বড় কথা

সারা মাঠ জুড়ে নব্বই মিনিট অসাধারণ খেলে,
বিপক্ষ দলকে একবারের জন্যও কাছে ঘেঁষতে না দিয়েও
মুহূর্তের ভুলে গোল হয়ে যায়
জানি খেলাটায় এই গোলটাই হাসি
লক্ষ ক্যামেরার আলোর ঝলকানি
কিন্তু তবুও বিজিত দলের লড়াই
আগামীর মনে চিরকাল বেঁচে থাকে

ইতিহাসের পাতায় হাঁটতে হাঁটতে
বুড়িবালামের যুদ্ধ আজও কিশোরের মনে প্রাণ পায়

রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০

তিনটি কবিতা

 















বিশেষ দৃষ্টি
----------------


সবাই বলল, আজ বিশেষ রাত্রি
আমি রাত্রির দিকে তাকালাম

রাত্রির জন্য আমার দৃষ্টি বিশেষ হলো ।




জয়লাভের পর
----------------------

পশ্চিমদিক থেকে ঝড় উঠলো
তুমি যুদ্ধে বের হয়ে গেলে

তুমি যখন যুদ্ধে জয়লাভ করলে
পশ্চিমের ঝড় তখনও সমানতালে চলছে ।





সাইকেল চলে গেলে
-----------------------------

সামনে দিয়ে সাইকেল চলে গেলে
আমি চাকার দাগে চোখ রাখি

মনে হয় এই রাস্তা দিয়ে 
আগে কখনও কিছু যায় নি

লোকটিও যেন এই প্রথম সাইকেল চাপছে ।






শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০

মুখোমুখি






গত সেপ্টেম্বর মাসে একেবারে মুখোমুখি দেখা
সম্পাদকমশাই কুশল জিজ্ঞাসা করলেন,
যেন পথ চলতে চলতে হঠাৎ কোনো গল্পের বিষয়
পেয়ে গেছেন ------ এইরকম একটা ভান করে
গল্পকারটি মুখে কি বিড়বিড় (পড়ুন গালাগাল)
করতে করতে সম্পাদককে পাশ কাটিয়ে সামনে
                                                এগিয়ে গেলেন ।

আর আজ ডিসেম্বর মাসের সাতসকালে
সেই গল্পকারটির দক্ষিণ হস্ত নাচতে নাচতে
সম্পাদকের বাড়ির কলিংবেলের সুইচে
দরজা খুলতেই একেবারে প্রশ্নের ফোয়ারা --------
আপনার বুকের ব্যথাটা এখন কেমন আছে ?
বৌদির ডান চোখটা এখন ভালো আছে তো ?
বেলা বারোটায় সেই পাঁচটা কাক এখনও আসে ?

গতকালই ত্রৈমাসিক গল্পের কাগজটির 
অক্টোবর-ডিসেম্বর সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে
প্রায় একবছর আগে গল্পকারটির পাঠানো
একটি গল্প এই সংখ্যায় পাঁচটি গল্পের অন্যতম ।




বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০

ভুলে যেতে শেখো

















ভুলে যাও, ভুলে যেতে শেখো
ভুলে যাও, ভুলে যেতে শেখো

মনে রাখলেই মনে মনে
ছড়িয়ে পড়বে হাজার ডালপালা
শিকড় যাবে গভীর থেকে আরও গভীরে
লক্ষ লক্ষ খণ্ড হয়ে ভেঙে পড়বে

এখন তো গুটিয়ে নেবার পালা
চারপাশ আজ বড় ছোটো হয়ে আসছে
এক উঠোন ভেঙে বার ঘরে ভাগ হয়ে যায়
কোথায় তুমি আর কোথায় তোমার
ফেলে আসা শৈশবের মার্বেল,
বেনেপুকুরের পারে সারি সারি আমগাছ,
গামছায় ধরা বেলেমাছ আর
হাঁটুকাদা কৈশোরের উঠোন ?

এসব আজ আর কেউ মনে রাখে না
মনে রাখলেই ছড়িয়ে ছড়িয়ে যাবে
ছড়িয়ে গেলেই বেড়ে যাবে মায়া

ভুলে যাও, ভুলে যেতে শেখো
ভুলে যাও, ভুলে যেতে শেখো ।

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

মাটিতে পা




গায়ে একটু ফাগুনের হাওয়া লাগলেই মন উড়ে যায় গ্রামে। মনে পড়ে এই আমিই না একদিন মাথায় ঘুড়ি নিয়ে আলে আলে ছুটেছিলাম। বুঝতে পারি শহর এখনও আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করতে পারে নি। রাস্তার ধারের গুমটিতে একমাত্র কৌটোয় গোটা চারেক বেকারির বিস্কুট আর এক কেটলি গরম চা নিয়ে বসে থাকা লোকটাকে আমি এখনও ঈর্ষা করি। জোর করে কেটলি নিয়ে মাটির ভাঁড়ে নিজের চা নিজে ঢেলে নিই। বুঝতে পারি আমার ভেতরে একটা মা বেঁচে আছে এখনও। আমার দু'পা এখনও মাটিতে। উড়ে যাওয়ার গল্প শুনলেও, মনে ওড়ার ইচ্ছে জাগলেও পুরোপুরি উড়ে যাব না কোনোদিন।

রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০

অন্ধকারে ডুবে



সারাটা দিন উঠোন জুড়ে সাজিয়ে রাখলে তোমাকে। প্রতিটি পদক্ষেপে তোমার ক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছিল। সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছিলে 'তোমার উঠোন'। তোমার প্রতিটা মুখে জ্বালানো ছিল বাতি, তবুও উঠোন জুড়ে ছিল চাপ চাপ অন্ধকার। কোনো কোনো জায়গায় যেন খুব চাপাস্বরে কেউ কথা বলছিল। তাদের কথাতেও উঠে আসছিল চাপ চাপ অন্ধকার। কোনো কোনো জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল বিষাক্ত সব পোকামাকড়। নিজেকে দেখে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলে একবার। তোমার উঠোনে পা রেখেছিল কেউ। হারানোর ভয়ে তাকে বড় ভয় পেয়েছিলে তুমি। নিজের সামনে একটা আয়না রাখলেই পারতে। কিছুই হারাতো না বরং নিজের প্রতিটি পদক্ষেপ পড়ে নিতে পারতে। তোমাকে আরও গভীর অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে সে এখন ফিরে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০

চেনা ছকে



















একেবারে নিয়ম মতো সোজাসুজি
একটু ডানদিকেও না, একটু বাঁদিকেও না
দশটা পাঁচটার যাতায়াত
রাস্তায় কিছু কিছু জায়গায় প্রয়োজনের দাঁড়ান
অপ্রিয় কথায় গালাগাল
প্রিয় কথায় গলে যাওয়া
রাতে রোজকার খেলা -----
তারপর বিছানা আঁকড়ে সেই চেনা ঘুম

এইভাবেই কেটে গেল এতগুলো বছর
একেবারে নিয়ম মতো সোজাসুজি
একটু ডানদিকেও না, একটু বাঁদিকেও না 



সিঁড়ি

  আমার ভাবনার মধ্যে  কখনও সিঁড়ি ছিল না চললে সিঁড়ি তো লাগেই তাই রাস্তায় সিঁড়ি আসে সিঁড়ি তো আসলে রাস্তা নদীর এগিয়ে চলার পথ সিঁড়ি দিয়ে ...